আমি যখন গুগল অ্যাডসেন্স শুরু করেছিলাম, তখন কয়েকজনের লিখে পড়তাম সারাদিন। যেমন ত্রিভুজ ভাই, জিন্নাত-উল-হাসান ভাই এবং রিয়া আপু।
রিয়া আপু এখন অনলাইনে নেই (বাংলাদেশের কমিউনিটিতে নেই) কিন্তু তার কাছে সেই ২০০৩ সালে করা ইমেইলগুলো এখনো রয়ে গেছে।
তার কাছে করা একটা ইমেইল এবং তার উত্তর এখানে হুবহু দিয়ে দিলাম (উনার সাথে কন্টাক্ট নেই আমার, তাই অনুমতি নিতে পারি নি)। এই ২০১৯ সালেও ওনার কথাগুলো এবং টিপসগুলো আপনাদের কাজে লাগবে বলে আমার বিশ্বাস।
কেমন আছেন আপু? অনেকদিন আপনার সাথে কথা হয় না। মাঝে গ্রীষ্মকালীন ছুটির জন্য অফলাইনে ছিলাম, তাই ব্লগগুলাতেও আসতে পারি নাই।
গুগল এডসেন্স নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন আছে। প্রশ্নগুলা করি।
প্রশ্ন ১। আমি জানি আপনি গুগল এডসেন্স থেকে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। আমিও গুগল এডসেন্স ইউজ করছি, মোটামুটি সাফল্য পাচ্ছি। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে….কোন ধরনের Advertisement এ মানুষ বেশী ক্লিক করে? তার মানে, আমি যদি নতুন কোন ব্লগ খুলি; আপনি কোন ধরনের niche এর ব্লগ খুলতে বলবেন? দেখা গেছে আনেক হাই পেয়িং একটা কিওয়ার্ড নিলাম, অনেক ভিজিটর থাকা সত্ত্বেও ক্লিক পড়ছে না। এর কারন কি? আপনার ক্ষেত্রে এরকম হয়েছে কখনো?
প্রশ্ন ২। এডসেন্সের Ads গুলোতে কি ব্লেন্ডিং করলে বেশি ক্লিক পড়ে; নাকি এডের টাইটেল বা লিংকগুলার কালার ব্লগের মূল কন্টেন্টের সাথে অসামন্জস্য রাখলে বেশী ক্লিক পড়ে?
প্রশ্ন ৩। আমার এডসেন্স একাউন্টে এপ্রিল মাসের ব্যালেন্স শো করছে। কিন্তু এখনো চেক ইস্যু হচ্ছে না। আপনার কি এপ্রিল মাসের চেক ইস্যু হয়ে গেছে? আমি নতুন পাবলিশার বলে গুগল আমার সাথে আবার বিট্রে করবে নাতো?
প্রশ্ন ৪। আপনার ব্লগে কয়েকদিন আগে বলেছিলেন যে বিভিন্ন আর্টিকেল ডিরেক্টরি থেকে কন্টেন্ট নিয়ে রিএরেন্জ করে ব্লগে দিবেন এবং দেখবেন এডসেন্স কেমন কাজ করছে। তো কেমন দেখলেন? কেমন ফল পাওয়া গেল? এব্যাপারে একটা ওয়েবসাইটের সন্ধান পেলাম সেটা হচ্ছে http://seolinkvine.com । (২০১৯ সালের মার্চ আপডেট – ওই সাইটটা ডাউন) সরাসরি নতুন নতুন ইউনিক কন্টেন্ট লিখে আপনার ওয়েবসাইটে পাবলিশ করে দেবে। হয়তো পোস্টের মধ্যে লিংক টিংক দিবে। সার্ভিসটা অবশ্য ফ্রি। ওদের সার্ভিসটা কি নেয়া যায়? কোন ঝামেলা হবে কিনা বুঝতেছি না। একটু পরামর্শ দিয়েন।
প্রশ্ন ৫। আরেকটা একান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি। আপনার ব্লগগুলার ভিজিটরদের মধ্যে রেফারেল ভিজিটরদের সংখ্যা কেমন?এটা টোটাল ভিজিটরের মধ্যে কত পার্সেন্ট? তথ্যটা জানালে আমার উপকার হবে।
ধন্যবাদ আপু। আর….. আবারো মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য স্যরি। ভালো থাকবেন।
রিয়া আপুর উত্তরঃ
কোন ধরনের বিজ্ঞাপনে ক্লিক বেশি হয়? এর জন্য কিছুটা মনস্তত্ত্ব জানার প্রয়োজন আছে, অল্পই। মানুষ যখন যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনে পড়ে যাবে তখনই হন্যে হয়ে তথ্য খোঁজে। সেইসব বিষয়ের ব্লগে ক্লিক সবচেয়ে বেশি। যেমন, আমেরিকায় মদ খেয়ে গাড়ি চালালে সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার, লাইসেন্স যাবে, এবং আর পাবেনা। শাস্তি তো নাহয় ছেড়েই দিচ্ছি। জীবনে দ্বিতীয়বার আর লাইসেন্স না পাওয়া মানে বাজে ব্যাপার, জানোই তো? সেইজন্য DUI (driving under influence) বিষয়ের ব্লগে সাঙ্ঘাতিক ক্লিক রেট। কারন সেখানে মানুষ তথ্যের পাশাপাশি উকিলের খোঁজ করছে।
এর পরে ধরো, ক্রিমিনাল আইনের ব্যাপারেও জটিল রকমের জনপ্রিয়তা আছে। অপরাধমূলক কাজ করে ফেলেছে এখন বাঁচতেই হবে! বুঝতে পারছো এটা জীবনমরণ সমস্যার সামিল। তাইনা? আমাদের দেশের মতো তো নয় যে অপরাধীরা বেআইনি কাজেও চিন্তিত নয় এবং তারা শত অপরাধের পরেও খোলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই ক্রাইম সংক্রান্ত আইন এবং তার প্রতিকারের ব্লগেও ক্লিক রেট অনেক।
তোমাকে এইভাবে খুঁজে বের করতে হবে ভেবে, কি কি বিষয়ে মানুষের প্রচণ্ড প্রয়োজন পড়ে। এমন অনেকগুলি আরো বিষয় আছে। আমেরিকানরা ভীষণ ভীতু, এবং তাদের আইন অনেক শক্ত, মাথা খাটাও, খুঁজে নাও কিসে লোকে ভয় পায় এবং কিসের প্রতিকার তাদের জন্য ভয়ঙ্কর / লজ্জাকর ইত্যাদি, এইসব বিষয়ের ক্লিক মূল্য অনেক।
অনেক হাই ভ্যালু কীওয়ার্ড নিয়েও ভাল সাফল্য পাচ্ছোনা। ভাল করে শোনো, উচ্চ মূল্যের কীওয়ার্ড কেন হয়? কারন তাতে সার্চ কম। তাই তুমি ভিজিটার কম পাবে। যদিও বা পাও, সবাই ক্লিক করেনা। এখানে এসইও করতে হয় বেশি, নাহলে অন্যান্যদের সাথে পাল্লা দেওয়া যায়না। কম সার্চের কীওয়ার্ডে লোকে ব্লগ বানায় না, স্ট্যাটিক কন্টেন্ট সাইট বানায়। তাতে প্রতিদিনের আপডেট ঝামেলা নেই। এইসব বিষয়ে রোজ রোজ লেখার কিছু থাকেনা।
উচ্চ মূল্যের কীওয়ার্ড দিয়ে সাইট বানাবে তখনই যখন তোমার এডসেন্স আয় অন্যান্য দিক থেকে ভাল করে আসতে থাকবে। তখন এইসব এক্সপেরিমেন্ট করবে যাতে এইসব থেকে আয় নাহলেও মন না ভাঙে। এতে সময় লাগে, সময়ের সাথে সাথে পরে আয় হয়।
গুগল আগেই সাইটকে সার্চে উপরের দিকে আনেনা। কয়েক মাস টাইম নিয়ে দেখে এই সাইট চলবে নাকি বন্ধ হয়ে যাবে। তুমি তো জানো, এটা গুগলের বিজনেস, তাই একবার ইন্ডেক্স করে নিলে পরে যদি সাইট বন্ধের ফলে ৪০৪ এরর আসে, তবে গুগলের বদনাম হবে। উচ্চমূল্যের কীওয়ার্ডে গুগল দেখবে কতোদিনের সাইট তোমার, সেটা ওয়েবসাইট নাকি ব্লগ, এবং, অবশ্যই সাইটে ভাল কন্টেন্ট আছে কিনা। সার্চ কম মানেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, বিজ্ঞাপনদাতাদের টাকার মূল্যও দেখতে হয় গুগলকে, গুগল নিজেও তো সেই টাকা থেকেই কমিশন পায়! এইসব ভাবো?
উচ্চমূল্যের কীওয়ার্ডের সাইটে ভিজিটার যা দেখছো, তাদের সবাই আসল ভিজিটার নয়। অনেকেই তোমার competitor, তোমার সাইট দেখতে আসে। স্বভাবতই তারা ক্লিক করবেনা। শামীম, তোমাকে একটা সিক্রেট জানাই, আমি কিন্তু বেশ কয়েকটা ভাষা জানি, এবং অন্যান্য অনেকগুলি ভাষায় প্রতিযোগিতা কম, আমি সেইসব ভাষাতেও সাইট বানিয়ে আয় করেছি। কিন্তু তুমি কি করবে? ভাল অনুবাদ সফটওয়্যার খুঁজে কাজ চালিয়ে নিতে পারো। আমি ফ্রি আর্টিকেল দিয়ে যা করেছি শুনবে? আমি আর্টিকেল নিয়েছি, এবং অন্য সফটওয়্যার দিয়ে সেই লেখার অনেক শব্দ পালটে নিয়েছি, তাতেই লেখা ইউনিক হয়ে গেছে।
শামীম, নেট ঘাঁটো, অনেক কিছু জানতে পারবে যাসব জানলে রাতে ঘুম উড়ে যাবে। তুমিও জানতে পারবে কিকরে মাসে ৫/১০ হাজার ডলারের আয় হতে পারে এডসেন্স থেকে। আমি ৩০০০ ডলার পার করেছি জানুয়ারি মাসেই, এমাসের প্রায় ৫২০০ আসছে। তোমার কমপিউটার এবং নেট কানেকশান যদি যথাযোগ্য ব্যবহার করতে পারো, তবে আর দেখতে হবেনা, আকাশে উঠে যেতে পারবে তুমিও। আমার জিদ ছিল যে আমি খুঁজে বের করবোই কিকরে এইসব ৩ – ৭ হাজার ডলারের আয়ের গল্প আসে, এইসব সত্যি নাকি মিথ্যা। এক্সপার্টরা প্রচুর আসল জিনিসই জানায়না। সেটাই মুসিবত। তারা জ্ঞান প্রচার করছে, তবে সব অর্দ্ধেক। তাই অন্যান্যরা অন্ধকারে হাত চালাচ্ছে এবং মন ভাঙছে অনেকেরই। আমি এক্সপার্টদের দোষ দিইনা, কারন গুরুমন্ত্র বলে দিয়ে নিজেদের রাস্তা কঠিন করবেনা কেউই।
তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, গুগল কাউকে বিট্রে করেনা। টাকা তুমি পাবেই। এ মাসের পেমেন্ট প্রসেসিংয়ের সময় আজকে থেকে শুরু হচ্ছে। ২২ থেকে ২৭’এর মধ্যে হয়। পেমেন্ট ছাড়বে ২৫-২৭’এর মধ্যে। তোমার মে মাসের ব্যালান্স পোস্টিং হবে জুন মাসের ১-৭ তারিখের মধ্যে। এখন যে চেক পাবে সেটা এপ্রিল পর্যন্তই।
রেফারেল ভিজিটার, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছো। তুমি মিশ্চয় দেখেছো যে আমি নিজে থেকে আমার কোনো ভাল সাইটের ঠিকানা দিইনা ব্লগে কিম্বা কমিউনিটি ব্লগে। তার একটাই কারন। সেখানে সব অভিজ্ঞ ইউজার। হ্যা, এতে ভিজিটার আসে, সাইটের এলেক্সা র্যাঙ্ক বাড়ে, তবে কেউই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার ব্যাক্তি নয়। মাঝে থেকে আমারই ক্ষতি, কারন, এতে করে নিজেরাই ক্লিক না করা ভিজিটার এনে ফেলি আমরা। ফলে ক্লিক থ্রু রেট যায় কমে। নিজের CTR কেউ এইভাবে নিজেই কমায়? আমি করিনা এইসব। আমি সম্পুর্ণভাবেই চেষ্টা চালাই যাতে সার্চ ইঞ্জিন থেকেই ভিজিটার আসে। কোনো রকমের রেফারেলের মধ্যেই যাইনা আমি। তাই, আমি যেসব সাইটের লিঙ্ক দিই এখানে ওখানে, সেইসবে হয় বাংলা সাইট (এডসেন্স নেই) নয়তো খুব অল্প ট্র্যাফিকের ব্লগ যেখানে ক্লিক থ্রু রেটের তোয়াক্কাই করিনা আমি।
আমার কথা
আপু কিছু কারণে আমাদের কমিউনিটিতে নেই এখন। উনি থাকলে এই কমিউনিটিটা অনেক সমৃদ্ধ হতো। অনেক ভালো কিছু জানতে পারতো বাংলাদেশের অনলাইনে ইনকাম করা মানুষজন। আপুর বর ছিলেন কৌশিক বিশ্বাস। তিনিও অসাধারণ মানুষ ছিলেন। আমার মনে আছে ২০০৪ সালের দিকে সারা রাত জেগে আমার একটা সাইটের প্রব্লেম ফিক্স করে দিয়েছিলেন। উনারা যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক।
- এসইও (SEO) কি ওয়েব থ্রি (Web 3.0) যুগে থাকবে? নাকি হারিয়ে যাবে? - May 15, 2022
- ব্ল্যাক ফ্রাইডে ছাড় ২০২১ (মার্কেটার এবং ব্লগারদের জন্যে যত টুলস) - November 24, 2021
- গুগল স্প্যাম আপডেট – নভেম্বর ২০২১ টা কি এবং কি কি স্প্যাম উপেক্ষা করতে হবে? - November 6, 2021
আপুর উত্তর গুলোতে লুকায়িত অনেক ইনফরমেটিভ টিপস আছে। কাজে লাগাতে পারলেই বুম। ধন্যবাদ ভাই, শেয়ার করার জন্য।