গুগল লেটেস্ট রিভিউ কনটেন্ট আপডেট (A টু Z গাইডলাইন)

বর্তমানে যারা এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে জড়িত আছেন, বিশেষ করে অ্যামাজন প্রোডাক্ট রিভিউ কনটেন্ট, তাদেরকে গুগোলের এক নতুন আপডেটের কারণে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। বেশিরভাগ সাইট গুলো তাদের রেংকিং হারিয়েছে এবং ভিজিটর নামতে নামতে চৌকির নিচে চলে গেছে।

এটা যে শুধুমাত্র যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করছেন তাদেরকে প্রভাবিত করেছে তা কিন্তু নয়, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রধান অস্ত্র হচ্ছে মানসম্মত কন্টেন্ট। আর এই অস্ত্রের গোলা, বারুদ, কামান, দাগা, যে নামেই অভিহিত না কেন, তা কিন্তু কনটেন্ট রাইটার কে জোগান দিতে হয়।

অর্থাৎ বলতে গেলে গুগলের সাথে লড়তে এসইও টিমকে সঠিক কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হয় আর আমাদেরকে সেই কিওয়ার্ড এর উপর পর্যাপ্ত তথ্য, উপাত্ত এবং গল্পের মাধ্যমে একটি প্রোডাক্ট এর রিভিউ সুন্দর ভাবে ভিজিটরের সামনে উপস্থাপন করতে হয়। যা একজন ঘুরতে আসা ভিজিটরকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ত্বরান্বিত করবে এবং সে অনায়াসেই আপনার ক্লায়েন্টের কাস্টমার হবে।

যা হোক অনেক কথা বলে ফেললাম এবার তাহলে কাজের কথায় আসি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে রিভিউ কনটেন্ট লেখার জন্য আপনি বেশি সম্মানি পেয়ে থাকেন। আর এই আপডেটটি যেহেতু রিভিউ কনটেন্ট লেখার জন্য বেশি উপযোগী তাই এক্ষেত্রে আপনাকে কিন্তু আপনার ক্লায়েন্টকে জোগান দেওয়ার জন্য গোলা বারুদ গুলো একটু ভিন্ন ভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে।

এ আপডেট সম্পর্কিত ঘোষণায় গুগোল যা বলেছে

গুগোল অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং পর্যালোচনার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছে যে রিভিউ কনটেন্ট নামে আমরা যে সকল কনটেন্ট লিখে থাকি তা মূলত অ্যামাজনের থেকে ধার করা প্রোডাক্টের তথ্য-উপাত্ত আর গোজামিল ভাষায় কিছু এলোমেলো কথাবার্তা।

এই গোজামিল ভাষায় রিভিউ কনটেন্ট লেখার দিন কিন্তু এখন প্রায় শেষ। গুগোল যে সকল সাইটের রিভিউ কন্টেন্ট এ শুধুমাত্র অ্যামাজন এর উপর ভিত্তি করে দেওয়া তথ্য উপাত্ত পাবে তাদেরকে লেস প্রায়োরিটি দিবে। এই আপডেট এর ফলে গুগোল সেই সকল সাইটকে বেশি গুরুত্ব দেবে যেখানে একজন ইউজারের লাইফ এক্সপেরিয়েন্স সহ একটি প্রোডাক্ট এর সকল ধরনের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ভিজিটরকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

যেহেতু এই আপডেটটি কোন কোর আপডেট নয় তাই একটু বুদ্ধি খাটিয়ে লেখার কৌশল অবলম্বন করতে পারলে খুব সহজে একজন রাইটার হিসেবে আপনি গুগলের নতুন আপডেটের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন।
এবার তাহলে আসা যাক, কিভাবে একজন রাইটার হিসেবে আপনি গুগোলের এই আপডেটের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেবেন।

সঠিক স্থানে প্রোডাক্ট সম্পর্কে দক্ষতার সাথে আলোচনা করা

রিভিউ কনটেন্ট লেখার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে লেখার মধ্যে দক্ষতার সাথে প্রোডাক্ট সম্পর্কে আলোচনা করা, এবং যতটুকু সম্ভব অবাঞ্চিত, অযাচিত, ও অহেতুক কথাবার্তা এড়িয়ে চলা।
আর একটি প্রোডাক্ট সম্পর্কে দক্ষতার সাথে আলোচনা করা তখনই সম্ভব হবে যখন সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কে আপনি খুব ভালোভাবে জানবেন। অর্থাৎ

👉প্রোডাক্টটি কি
👉কেন ব্যবহার করা হয়
👉ব্যবহার করলে কি উপকার পাওয়া যায়
👉না ব্যবহার করলে কি ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়
👉এই প্রোডাক্ট ব্যবহার করার কারণে সুবিধার পাশাপাশি কোন অসুবিধা হবে কিনা
এই সবগুলো বিষয় আপনার নখদর্পণে থাকা দরকার।

কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা যেহেতু রাইটার প্রোডাক্টটি ব্যবহার করি নি তাই এত গুলো বিষয় আমাদের পক্ষে আগে থেকে জানা সম্ভব না।

এ ক্ষেত্রে যা করণীয় তা হচ্ছে প্রোডাক্টটির বাস্তবিক ব্যবহারকারীদের খুঁজে বের করে তাদের অভিজ্ঞতা রিসার্চ করে সে সকল তথ্য উপাত্ত খুঁজে বের করা।

আর এ সকল তথ্য উপাত্ত শুধুমাত্র অ্যামাজনের সাইটগুলো ভিজিট করলে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ অ্যামাজনে প্রোডাক্টটির প্রস্তুতকারকের তথ্য-উপাত্ত দেওয়া থাকে, আর সকল প্রস্তুতকারকের কাছে তার প্রোডাক্ট সবচাইতে সেরা, এটাই স্বাভাবিক। এবং শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেজ এর কনটেন্ট গুলো পড়লেও পাওয়া যাবে না। কেননা আপনি তাদের চাইতে ভাল কিছু লেখার চেষ্টা করছেন, তো তাদেরকে ফলো করলে আপনার লেখা কখনোই তাদের থেকে ভালো হবে না।

এক্ষেত্রে অন্যান্য কতগুলো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম রয়েছে সেগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে। যেমনঃ Quora, Reddit, Amazon Customer Reviews, Google searched FAQs, YouTube etc.
আপনি যখন এত গুলো প্ল্যাটফর্ম থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন তখন সেখানে ভুল তথ্য উপাত্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এবং ওয়ার্ড কাউন্ট সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে শুধু শুধু অযাচিত কথাবার্তা লিখতে হবে না।

একটি সুন্দর কনটেন্ট লেখার জন্য সকল ধরনের মসলা রেডি। এবার শুধু মসলাগুলো কে কাজে লাগিয়ে অসাধারণ একটি রেসিপি রান্নার অপেক্ষা।

কোন প্রোডাক্টের ফিচার যেভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে

যেকোনো প্রোডাক্ট এর ফিচার অবশ্যই অ্যামাজন থেকে সংগ্রহ করতে হবে আর এখানে তথ্য পরিবর্তন করার সুযোগ একদমই নেই, তবে উপস্থাপন করার পদ্ধতি পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে হাজার হাজার।
অর্থাৎ প্রতিটি প্রোডাক্ট এর রিভিউ কনটেন্ট লেখার সময় একই পদ্ধতিতে ফিচার উপস্থাপন না করে কোন ফিচার এর কি কাজ, এবং অন্যান্য একই ক্যাটাগরির প্রোডাক্ট থেকে এই প্রোডাক্টের ফিচারটি কিভাবে একজন ব্যবহারকারী বেশি সুবিধা প্রদান করবে সেটা বলা যেতে পারে।

এক্ষেত্রে পাঠকের জন্য অন্যান্য প্রোডাক্টের সাথে আপনার রিভিউ করা প্রোডাক্ট এর তুলনা করতে সহজ হবে, যা তাকে ডিসিশন নিতে সাহায্য করে।

প্রোডাক্ট এর প্রজ এন্ড কন্স গুলো নিয়ে বিস্তারিত বলা আছে কিনা

এক্ষেত্রে অবশ্য আমাদের রাইটারদের ক্লায়েন্টরা সব সময় শব্দ নির্ধারণ করে দেন। ‌ অর্থাৎ পাঁচটি প্রজ লেখার জন্য 25 থেকে 30 শব্দ এবং একটা দুইটা কন্স লেখার জন্য 10 থেকে 12 শব্দ। এক্ষেত্রে একটা প্রজ লিখে তারপরে এই প্রজ কেন লিখেছি, তার রিলায়েবল কোন কারণ লেখার সুযোগ পাওয়া যায় না। একই ব্যাপার ঘটে কন্স লেখার সময় ও।

এটা ঠিক আমরা যখন প্রোডাক্টের রিভিউ লিখেছিলাম তখন অনেক তথ্য এবং উপাত্ত সেখানে উপস্থাপন করে ছিলাম। কিন্তু সেই সকল তথ্য এবং উপাত্ত গুলো ছিল অবশ্যই বিশ্লেষণধর্মী, এবং বায়িং কি ফ্যাক্টর একজাক্ট কোন রিজন সেখানে লেখা থাকে ও না অনেক সময়।

যেমন: একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যদি লেখা হয় তাহলে মোবাইল ফোনটির ক্যামেরা, ব্যাটারি, ডিসপ্লে, স্ক্রিন, রেম, রম, চার্জার, চার্জ দেওয়ার সময়,‌ দাম ইত্যাদি বিষয়গুলো বায়িং ডিসিশন কি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।
যেহেতু অনেক সময় রিডার শুধুমাত্র একটা প্রোডাক্টের প্রজ এবং কন্স স্ক্যান করে তারপরে সম্পূর্ণ রিভিউ পড়ে এজন্য এখানে প্রতিটি প্রজের বিপরীতে যদি রিলায়েবল কোন কারন লেখা যায় তাহলে মনে হয় লেখাটা আরেকটু ইউজার ফ্রেন্ডলি হয়।

টার্গেট অডিয়েন্স কে উল্লেখ করা

একটি প্রোডাক্ট কখনোই সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য ডিজাইন করা হয় না। অর্থাৎ প্রোডাক্টের টার্গেটেড কাস্টমারকে উল্লেখ করে রিভিউ লেখা উচিত। এক্ষেত্রে ইউজারের বয়স, দেশ, ভাষা এবং অন্যান্য কিছু বিষয় মাথায় রেখে কনটেন্ট লিখলে গুগোল এবং রিডার এর কাছে অনেক সহজেই সেটা রিলায়েবল বলে মনে হয়।
এতক্ষণ গুগলের নতুন কোর আপডেট নিয়ে অনেক কথাই লিখে ফেললাম।‌ যে বিষয়গুলো উল্লেখ করলাম সেই বিষয়গুলো একজন রাইটারের নখদর্পণে আনার জন্য অনেকটা সময় নিয়ে রিসার্চ করতে হয় এবং লেখালেখি নিয়ে মোটামুটি ধরনের অভিজ্ঞতা ও থাকতে হয়। একেবারে নিউবি হলে এত গুলো বিষয় মাথায় রাখা একটু কঠিন হয়ে যায়।

কিন্তু সমস্যাটা হয় তখন, যখন একজন অভিজ্ঞ রাইটার কেও নিউবি এর মত ট্রিট করা হয় এবং প্রাইস অফার করা হয়। এত কিছু মেইনটেইন করে কনটেন্ট লিখতে একজন রাইটারের যতটুকু সময়, শ্রম, এবং মেধা বিনিয়োগ করতে হয় সেই তুলনায় যখন পারিশ্রমিক পাওয়া যায় না, তখন নিজের স্কিল আপডেট করার চাইতে গোজামিল ভাষায় অনেকগুলো কনটেন্ট লিখে একই পরিমাণ অর্থ উপার্জনের দিকেই অনেক রাইটার ঝুঁকে পড়ে।
এক্ষেত্রে আলটিমেটলি সম্পূর্ণ ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হয়। অনেক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ভাল কনটেন্ট রাইটার খুঁজে পাওয়া যায় না।

বাকি বিশ্লেষণ, আপনার হাতেই ছেড়ে দিলাম। ‌ ভুলভাল কিছু লিখে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং কমেন্ট করে আশা করি সেটা শুধরে দিবেন।

আজ তাহলে যাই, হয়তো নতুন কোন লেখা নিয়ে ভবিষ্যতে আপনাদের সামনে আবার হাজির হব।
আর অবশ্যই এই প্যানডেমিক চলাকালীন সময়ে আমরা সবাই যেন একটু স্বাস্থ্যবিধি গুলো মেনে চলি।
কেননা আমার একা স্বাস্থ্যবিধি মানা মানে আমার একা ভালো থাকা নয়, আমার পাশের মানুষটিকেও ভালো রাখছি।

আর্টিকেলটি লিখেছেন : Sonia Akther

Yaqub Nipu
আপনার ইমেইলে বাংলায় ইন্টারনেট মার্কেটিং এবং এসইও রিলেটেড লেটেস্ট খবর ও আপডেট পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

Leave a Comment

Share via
Copy link
Powered by Social Snap