আপওয়ার্ক! নতুনরা কি করবো এবং কি করবো না?

অনলাইন পেশায় আসার পর অনেকেরই ইচ্ছা বা স্বপ্নের মধ্যে একটা হচ্ছে Upwork এ কাজ করা। আমারও তেমন ইচ্ছা ছিল, এবং অনেক বাধা পেড়িয়ে টুকটাক অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেগুলো শেয়ার করছি। বলে নিচ্ছি; আমি আপওয়ার্ক এক্সপার্ট না, অল্প কিছু জানি, সেগুলো শেয়ার করছি।

প্রথমত, আপওয়ার্কে বাংলাদেশ থেকে এ্যাকাউন্ট খোলা একটু কঠিন ছিল এবং আছেও সম্ভবত। কিছু স্পামিং এবং বাজে অভিজ্ঞতার জন্য বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ কয়েকটা দেশের ফ্রিলান্সারদের ক্লাইন্টরা এড়িয়ে যেতে চায় মাঝে মাঝে। এসব প্রতিকূলতার মধ্যেই আপনাকে লড়াই করতে হবে এবং প্রমান করতে হবে আপনি যোগ্য এবং সেরা!

পুরো ফাইলটা পড়ুন, ইনশা আল্লাহ্ কিছু ধারণা হবে। শেষে মেইন দুইটি পয়েন্ট রেখেছি।

প্রশ্ন একঃ আপওয়ার্কে কখন বেশি কাজ পাওয়া যায় বা ক্লাইন্ট বেশি থাকে?

উত্তরঃ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাতের সময়ে বেশি পাওয়া যায়। কারণ আমাদের সাথে আমেরিকার বা ইউরোপের সময়ের পার্থক্য রয়েছে প্রায় ১২ ঘন্টা। তবে দিনে যে আমেরিকান ক্লাইন্ট পাওয়া যায় না বা জব পোস্ট হয় না, বিষয়টা এমন নয়। সব সময়ই কম বেশি জব পোস্ট হয়।

প্রশ্ন দুইঃ আমি নতুন হিসেবে কোন জব গুলোতে বিড করবো?

উত্তরঃ প্রথমত, পুরানো ক্লাইন্ট যারা, অর্থাৎ যারা ১ লক্ষ ডলার বা ৫০ হাজার ডলার ইতিমধ্যে আপওয়ার্কে ব্যায় করেছে, তারা নিশ্চয়ই পুরানো এবং অভিজ্ঞ ক্লাইন্ট। তারা আসলে এমন কেউকে খোজে, যে ফ্রিলান্সার তার জব ডিসক্রিপশন দেখেই আদিঅন্ত বুঝে যাবে। কারণ, তারা ব্যস্ত প্রচুর; তার হাতে আসলে নতুন কেউকে বুঝিয়ে বা শিখিয়ে কাজ দেয়া সম্ভব নয়।

তাই আমার ছোট অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বড় ক্লাইন্টরা নতুন ফ্রিলান্সারদের গুরুত্ব কম দেয়। তবে কিছু অল্প সংখ্যক ক্লাইন্ট আছে যারা নতুনদের সুযোগের কথা উল্লেখ করে দেয় জব পোস্টে। মনে রাখবেন, আপনার কভার লেটারের ২ লাইন পড়েই ক্লাইন্ট বুঝে যাবে আপনি এক্সপার্ট লোক নাকি নতুন লোক।

ক্লাইন্টের হিস্রি জবে গেলেই ডান পাশে দেখতে পাবেন। আর এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ক্লাইন্টের হায়ার রেট। অর্থাৎ সে কয়টা জব পোস্ট করছে আর কয়টা জবে হায়ার করছে। ক্লাইন্টের হায়ার রেট ৬০-৭০% হলে বিড করুন, ৫০% কম হলে না করাই ভাল। ছবিতে দেখুনঃ

  • Save

এখানে ক্লাইন্ট ২০১১ সাল থেকে আপওয়ার্কে আছেন এবং ইতিমধ্যে ৩ লাখ ডলারের বেশি খরচ করছেন এখানে। সহজেই বুঝা যায় যে সে অভিজ্ঞ এবং বড় ক্লাইন্ট।

দ্বিতীয়ত্বঃ ক্লাইন্টের পেমেন্ট ম্যাথোড ভেরিফাইড কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন। যদি দেখেন ক্লাইন্ট এক মাস আগে জয়েন করেছেন, এখনো ভেরিফাইড করেন নি কিন্তু অনেক গুলো জব পোস্ট করে ফেলেছেন, তাহলে সেই ক্লাইন্ট এড়িয়ে চলুন।

  • Save

এখানে দেখুন; ২০১৯ সালে জয়েন করে এখনই ভেরিফাইড না এবং কোন টাকাও সে খরচ করে নি। স্বাভাবিক ভাবে এই ক্লাইন্টের উদ্দেশ্য ভাল না। এগুলো নিশ্চিতভাবে এড়িয়ে চলুন।

তৃতীয়ত্বঃ যে জবে ইতিমধ্যে ২০+ এপ্লিকেশন হয়ে গেছে, সেখানে বিড না করাই ভাল। কারণ ২০ জনের মধ্যে ৩ জনের প্রোফাইল যদি এক্সপার্ট এর হয়, তাহলে তাদের প্রোফাইলের কারনে তাদের বিডটাই উপরে দেখাবে। নতুনদের গুলো নিচে পড়ে থাকবে।

  • Save

এখানে উপরের ছবিতে দেখুন, এই ২টা জবে প্রথমটাতে ১০-১৫ জন এবং দ্বিতীয়টাতে ২০-৫০ ইতিমধ্যে আবেদন করে ফেলেছে। আপনি না যাওয়াই ভাল। আপনার জন্য হচ্ছে এটাঃ

  • Save

এরচেয়ে কম হলে আরো ভাল হয়। তবে আমি উদাহরণ হিসেবে দেখানোর জন্য আর পাইনি এই মুহূর্তে। এখানে আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, যদি দেখেন যে জবটা ১০ ঘন্টা বা ২০ ঘন্টা আগে পোস্ট করা হয়েছে, কিন্তু বিড করেছে মাত্র ৫ জনে বা ১০ জনে, তাহলে সেটা আরো ভাল হয়। কিন্তু যদি ১০ মিনিটের মধ্যে ১০ জন করে ফেলে, তাহলে ওই জবটায় কম্পিটিশন প্রচুর। কাজ পাওয়াও জটিল।

শুধু শুধু বিড করে বিড নষ্ট করে লাভ নেই, কারন বর্তমানে বিড কিনে নিতে হয়। আর যদি বেশি বিড করে কাজ না পান, আপওয়ার্ক এটা ভাল চোখে নেবে না। সুতরাং সতর্ক থাকতে হবে।

চতুর্থত্বঃ কিছু জবে ক্লাইন্ট একটা নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া দিয়ে থাকে। যেমনঃ সে শুধু আমেরিকা বা ইউরোপের ফ্রিলান্সার নিবে, বা শুধু এশিয়ার নিবে। আপনার লোকেশনের সাথে না মিললে তখন ওটা লাল দেখাবে, লাল দেখালে সেখানে বিড না করা উত্তম।

  • Save

একই ভাবে, আর্নিং, ওয়ার্কিং আওয়ার, ল্যাঙ্গোয়েস, সব গুলোর প্রতি ক্লাইন্টের ক্রাইটেরিয়া থাকতে পারে। আপনার প্রোফাইল সেগুলোর সাথে না মিললে সেখানে বিড না করাই ভাল। এবং এই কাজ গুলো বেশি করলে সাসপেন্ড হওয়ার চান্স আছে।

  • Save

এই ছবিটাতে দেখুন, ভাষার ক্ষেত্রে ক্লাইন্ট দোভাসি বা নেটিভ চেয়েছে, আমার প্রোফাইলে তা নেই। সুতরাং ওখানে রেড মার্ক দেখাচ্ছে। আবার জব সাকসেসে ৮০% চেয়েছে, মানে এক্সপার্ট। আমার ৮০% নেই, আমার প্রোফাইলে আছে রাইজিং ট্যালেন্ট। তাই আমার বিড না করাই ভাল।

  • Save

প্রশ্ন তিনঃ আমার এক্সপেরিয়েন্স বা দক্ষতার সাথে পুরোপুরি না মিললে আমি কি বিড করবো কিনা?

উত্তরঃ ৯৯% জবে ক্লাইন্ট উল্লেখ করে দিবে যে আপনাকে এই জবটায় আবেদন করতে হলে কিছু দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা লাগবে। ছবিতে দেখুনঃ

  • Save

উল্লেখ করা দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার সাথে আপনার প্রোফাইলের দক্ষতা যদি ৭০ ভাগ বা ৮০ ভাগ মিলে যায়, তাহলে বিড করুন। ৫০ ভাগ মিললেও করা উচিত হবে না বলে মনে করি। [এখানে এক্সপার্ট ভাইদের ভিন্নমত থাকতে পারে] কারণ, যাদের প্রোফাইলের স্কিল এর সাথে ৯০ ভাগ বা বেশি মিলে যাবে, তাদের বিডটাই উপরে থাকবে এবং ক্লাইন্ট তাদের প্রোফাইলকেই বেশি প্রাধান্য দিবে।

মনে রাখবেন, আপনার অভিজ্ঞতার সাথে জব মিলে না এমন জবে অধিক আবেদনের কারণে আইডি সাসপেন্ড হয়ে যাওয়ার ৯০ ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং ইরিলেভেন্ট জবে আবেদন থেকে বিরত থাকুন।

প্রশ্ন পাচঁঃ আমার প্রোফাইলে Entry Level দেয়া, আমি কি Expert Or Intermediate Level এর জবে আবেদন করবো?

উত্তরঃ সহজে জবাব দিলে; না করবেন না। এখানে ক্লাইন্ট চেয়েছে এক্সপার্ট বা ইন্টারমিডিয়েট লেভেল। আপনি ১ বছর বা তার বেশি কাজ করলে তখন ইন্টারমিডিয়েটে যেতে পারেন। তার আগে এই জব গুলো এড়িয়ে চলুন। এখানেও প্রোফাইলের প্রাধান্য একটা মূখ্য বিষয়। এখানেও ইরিলেভেন্সির কারনে প্রোফাইল সাসপেন্ড হওয়ার চান্স আছে।

  • Save

প্রশ্ন ছয়ঃ ফিক্সড প্রাইজ নাকি আওয়ারলি জবে বেশি বিড করবো?

উত্তরঃ আমার ছোট অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি, ক্লাইন্টরা নতুন প্রোফাইলের জন্য ফিক্সড প্রাইজ জবে বেশি আগ্রহী।

যাই হোক, অনেক কথা বলে ফেললাম। জানিনা কাজে লাগবে কিনা, তাও ২-১ জনের যদি উপকারে আসে তাই চেষ্টা করলাম লেখার। আমি আগেই বলেছি, আমি অভিজ্ঞ না আপওয়ার্কে। তবে আপওয়ার্কে চেষ্টা করেছি প্রচুর এবং সামান্য একটু সফলতা আছে।

ছোট নোটঃ

  • ভারত, ফিলিপাইন, ইসরাইল এসব ক্লাইন্ট এড়িয়ে চলা ভাল।
  • নতুন ক্লাইন্টদের আশ্বাসে নিজেকে ভাসিয়ে না দেয়া উত্তম। ধরুনঃ আপনাকে বলল, তুমি আমাকে এই কাজটুকু বাড়তি করে দিলে তোমাকে বোনাস দিবো, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সে এই টাকা না দিয়ে চলে যেতে পারে। আপনি জব ক্লোজ করে দিলে আর কোন কিছু করার সুযোগ নাই, তবে জব ক্লোজ না করলে কেস করতে পারবেন। [আমি জানুয়ারিতে ১২০০ ডলার এর একটা ধরা খাইছিলাম :P]
  • ক্লাইন্টদের সাথে ফ্রি ভাবে কথা বলুন। তবে ইনবক্সে স্কাইপ আইডি বা ফেজবুক আপনি চাইতে যাবেন না।

এখানে কিভাবে বিড করবেন এগুলো নিয়ে আলোচনা করলাম না। প্রয়োজন বোধ করলে কমেন্টে জানান, ইনশা আল্লাহ্ লেখার চেষ্টা করবো।

ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।

Md Nayem Ullah
আপনার ইমেইলে বাংলায় ইন্টারনেট মার্কেটিং এবং এসইও রিলেটেড লেটেস্ট খবর ও আপডেট পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

18 thoughts on “আপওয়ার্ক! নতুনরা কি করবো এবং কি করবো না?”

    • রাইজিং ট্যালেন্ট বলতে বুঝায় যে, নতুন কোন মেধাবী ফ্রিলান্সার পেতে যাচ্ছে আপওয়ার্ক এমন টাইপ একটা বিষয়। আপনি যদি নতুন একাউন্টে ভাল কোন কাজ দ্রুত সফলতার সাথে করতে পারেন, তাহলে আপওয়ার্ক আপনাকে এই ব্যাচটা দিবে।

      Reply
  1. সুন্দর এবং ইনফরমেটিভ পোষ্ট।
    বিড কিভাবে করতে হবে সেটা নিয়েও অাপনার experience শেয়ার করুন

    Reply
    • ইনশা আল্লাহ্ চেষ্টা করবো ভাই। দোয়া রাখবেন।

      Reply
  2. আমার ১টা আইডি ছিলো যা খোলার ১৫দিনের মাথায় ২ক ডলার এর কাজ পাই। আমি নতুন এবং অনেক কিছু না বুঝার কারণে বাংলাদেশী বায়ার আমার কাজটা ক্লোজড করে(উনি নিজেও কিছু ঝামেলা করছে)।যাই হোক পরে অনেক দিন ব্যবহার না করার কারণে আইডি লক হয়ে যায়। এমতাবস্থায় আমার কি করা উচিত, পুরনো আইডি একটিভ করে কাজ করা? নাকি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে সামনে এগিয়ে যাওয়া।

    Reply
    • আইডি লক হওয়ার কারণ হচ্ছে ৩ মাসে বিড না করলে বা কাজ না পেলে। আপনি বিড করলেই পাবলিক হয়ে যাওয়ার কথা। পুরানো এ্যাকাউন্টেই করা ভাল, নতুন এ্যাকাউন্ট এ সময় লাগে। যেহেতু এই আইডিতে একবার ক্লাইন্ট এ্যাংগেজমেন্ট ছিল, তাই এটাই আবার একটিভ করার চেষ্টা করুন। ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।

      Reply
  3. ধন্যবাদ ভায় আপনাকে। আল্লাহ আপনাকে আরও উন্নতির শিখরে পৌঁছানোর তৌফিক দিক, আমাদের পাশে এভাবেই থাকবেন। শুভকামনা রইল। আস সালামু আলাইকুম

    Reply
  4. ধন্যবাদ আপনার গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটির জন্য। পোস্টটি পড়ে খুব উপকৃত হলাম। এবং আপওয়ার্ক সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম

    Reply

Leave a Comment

Share via
Copy link
Powered by Social Snap